যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন অনুমোদিত
সকল নিম্নমাধ্যমিক
ও মাধ্যমিক পর্যায়ের অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষে কেন্দ্রিয় ভাবে
নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করার খসড়া প্রক্রিয়া
০১. প্রোজেক্টের শিরোনাম
: ই-প্রশ্ন ব্যাংক
০২. সময়সীমা : ৩ মাস
০৩. ভূমিকা
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় যেসকল চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তার মধ্যে মান
সম্মত শিক্ষকের অভাব খুব গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অধিকাংশ শিক্ষকেরই তেমন কোন
প্রশিক্ষণ নেই। যে বিষয়ে তিনি পড়ান, সেই বিষয়ের উপর দক্ষতা না থাকায় এর প্রভাব গিয়ে
পড়ে শিখন পদ্ধতির উপর। উপরন্তু বাংলাদেশের শিক্ষা পদ্ধতি অনুযায়ী সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরির
জন্য অধিকাংশ শিক্ষকই যথেষ্ট সৃজনশীল নন। ফলে স্কুল গুলোতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য যখন
দুইটি করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তখন থেকে যাচ্ছে মান সম্মত প্রশ্নপত্রের একটি বিপুল
শূন্যতা। এই শূন্যতাকে পূরণের জন্য জড়িয়ে পড়ছেন তৃতীয় কোন পক্ষ আর সৃষ্টি হচ্ছে শিক্ষাকে
বাণিজ্যিকী করণের সুযোগ।
মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান
তাদের সুযোগ্য শিক্ষক পরিমন্ডলী দ্বারা নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করছেন, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়
ছাপছেন ও শিক্ষার্থীদের জন্য পরীক্ষা নিচ্ছেন। কিন্তু মানসম্মত শিক্ষকের অভাব যেহেতু
সমগ্র বাংলাদেশেরই শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বড় ত্রুটি। সেখানে এই সুবিধাটি অধিকাংশ শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানেরই নেই। ফলশ্রুতিতে কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান, বুক ডিপো, প্রেস ইত্যাদি
কয়েকজন শিক্ষককে সাথে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমিতি গঠনের মধ্য দিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছেন,
ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলো ছাপছেন এবং বিদ্যালয়গুলোতে বিক্রি করছেন। স্কুল কিমিটি
বা শিক্ষকদের বাইরে একটি তৃতীয়পক্ষ থেকে এই ধরনের প্রশ্ন তৈরি হওয়ায়, কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের
গুরুত্বপূর্ণ সাজেশনের লোভ দেখিয়ে গাইড বই ব্যবসায়ী ও কোচিং ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ক্ষেত্র
প্রস্তুত হচ্ছে। যা বাংলাদেশের সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি স্বরূপ।
কিন্তু প্রশ্ন নির্বাচন ও তৈরির ক্ষেত্রে আইসিটির সুবিধা গ্রহণ করে এই অবস্থা
থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে বের করে আনা সম্ভব। মিশন ২০২১ এর মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে
বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার শিক্ষা ও আইসিটি উভয় দিকেই গুরুত্বের সাথে কাজ করে
চলছে। ফলে আলোচিত সমস্যাটির বিষয়ে আইসিটির সুবিধা গ্রহণ করে একটি গ্রহণযোগ্য প্রশ্ন
ব্যাংক তৈরির মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব।
৪. উদ্দেশ্য :
ক. যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন অনুমোদিত সকল নি¤œ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক
পর্যায়ের অর্ধ-বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষে কেন্দ্রিয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত
স্বয়ংক্রিয় প্রশ্ন ব্যাংক তৈরি করা
খ. যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন আইডি ধারী সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ের শিক্ষকবৃন্দ
সিলেবাস ভিত্তিক প্রশ্ন আপলোড করা
গ. মানসম্মত প্রশ্ন তৈরিতে শিক্ষকদের আগ্রহ সৃষ্টি করা
ঘ. মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গাইডবুক বিক্রেতা ও কোচিং ব্যবসায়ীদের
প্রভাব কমানো
৫. ই- প্রশ্ন ব্যাংকের
রূপ রেখা
ই-প্রশ্ন ব্যাংকটি অনলাইন ভিত্তিক এমন একটি প্রশ্ন ব্যাংক হবে, যেখানে একটি
বোর্ডের অধীনের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের পাঠদানের বিষয় অনুযায়ী নৈর্ব্যক্তিক,
সৃজনশীল প্রশ্ন ও ব্যবহারিক বিষয়ের জন্য প্রশ্ন তৈরি করবেন। শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক মনোনীত
শিক্ষকদের প্যানেল এই সকল প্রশ্ন থেকে যাচাই বাছাই ও প্রয়োজনীয় সম্পাদনার মাধ্যমে চুড়ান্ত
প্রশ্নটি ব্যাংকে জমা করবেন। এরপর বিভিন্ন স্কুলগুলো শুধুমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে
তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়, শ্রেণী ও পরীক্ষাভিত্তিক প্রশ্নের সেট তৈরি করে প্রিন্ট
করার মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করবেন।
০৫.১ চূড়ান্ত প্রশ্ন যেমন হবে
প্রতিষ্ঠান প্রধান ইআইআইএন ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে প্রশ্ন ব্যাংক থেকে
স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্রেণি ও পরীক্ষা ভিত্তিক নৈর্ব্যক্তিক, রচনামূলক, ব্যবহারিক (অর্ধ-বার্ষিক,বার্ষিক,
প্রাক-নির্বাচনি,ও নির্বাচনি) প্রশ্নপ্রত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। অনলাইনে প্রশ্ন ব্যাংক
থেকে প্রশ্ন গ্রহণের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধান অধ্যায় নির্বাচনের সুয়োগ পাবেন । প্রশ্নে
প্রতিষ্ঠানের নাম, বিষয়,অধ্যায়,সময় ও নম্বর বন্টন নির্বাচন করলে প্রশ্ন ব্যাংকে জমাকৃত
সকল প্রশ্নের মধ্য থেকে র্যানডম পদ্ধতিতে চুড়ান্ত প্রশ্নের সেট তৈরি হবে (এনসিটিবির
সিলেবাস অনুযায়ী)থাকবে ।
এক প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নের সাথে অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রশ্নে কখনো মিল থাকবে
না। এরপর এটি পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করে প্রিণ্ট করার উপযোগী হবে। সরাসরিও প্রিন্ট অপশন
থাকবে।
তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা প্রশ্ন প্রণেতা শিক্ষক কখনো সমগ্র ব্যাংকের প্রশ্ন
দেখতে পারবেন না।
তবে নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশ্নের আউটপুট গ্রহণের ক্ষমতা শুধু প্রতিষ্ঠান
প্রধানের থাকবে। কোন প্রতিষ্ঠান কতটি প্রশ্ন ডাউনলোড করেছে সেটা সময় ও তারিখ অনুযায়ী
একটি নির্দিষ্ট সার্ভারে রেকর্ড থাকবে।
কোন প্রতিষ্ঠান যদি তাদের অ্যাডমিন প্যানেলে পরীক্ষার রুটিন এবং প্রশ্নের
সকল তথ্য পূর্বেই ইনপুট দিয়ে রাখে, তাহলে নির্দিষ্ট তারিখে পরীক্ষার ২ ঘন্টা আগে ঐ-দিনের
পরীক্ষার সকল শ্রেণীর সকল বিষয়ের প্রশ্ন একসাথে তৈরি করে ডাউনলোড করতে পারবে।
০৫.২ প্রশ্নদাতা
যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন আইডি ধারী সংশ্লিষ্ঠ বিষয়ের শিক্ষকবৃন্দ সিলেবাস
ভিত্তিক প্রশ্ন করে ই-প্রশ্ন ব্যাংকে গ্রহণের লক্ষে প্রশ্নদাতা হিসেবে প্রশ্ন আপলোড
করবেন । তাঁদের প্রত্যেককেই বাধ্যতামূলকভাবে প্রশ্ন তৈরি করতে হবে এবং একটি নির্দিষ্ট
ওয়েব অ্যাডমিন পেইজে প্রত্যেকটি শিক্ষকের জন্য সৃষ্টি করা ইউনিক পাসওয়ার্ডের মাধ্যমে
বিষয় ভিত্তিক প্রশ্ন তৈরি করে জমা করবেন।
কোন প্রশ্ন গৃহীত হলে প্রশ্নদাতা তার মোবাইলে স্বয়ংক্রিয় নোটিফিকেশান পাবেন।
প্রত্যেকটি গ্রহিত প্রশ্নের জন্য তিনি নিদ্দিষ্ট পয়েন্ট পাবেন। প্রশ্নদাতা
নিজের ইউজার প্যানেলে তাঁর দ্বারা জমাকৃত প্রশ্নের সংখ্যা ও তালিকা, গৃহিত প্রশ্নের
সংখ্যা, অর্জিত পয়েন্ট, র্যাঙ্কিকে নিজের অবস্থান দেখতে পাবেন।
০৫.৩ প্রশ্ন মডারেশন
(সম্পাদনা) প্যানেল
বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকের আপলোডক্রত সকল প্রশ্নই যাচাই-বাছাইয়ের জন মডারেশন/সম্পাদনা
প্যানেল যশোর শিক্ষা বোর্ডের আওতাধীন শিক্ষকবৃন্দের
মধ্য থেকে বোর্ড প্রশ্ন সম্পাদনার জন্য প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত/অভিজ্ঞ শিক্ষকদেও মধ্য থেকে
মডারেটর নির্বাচন করবেন।
সুপার অ্যাডমিন প্যানেল থেকে শিক্ষকদের শ্রেণি/বিষয়/আইডিতে ক্লিক করলে তিনি
মডারেশনে/সম্পাদনার সুয়োগ পাবেন । স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য মডারেটর কোন অবস্থাতেই
সম্পাদিত প্রশ্নটির কে দাতা সেটি দেখতে পারবেন না।
সিস্টেমে সম্পাদনার ভিত্তিতে প্রশ্ন জামাদানকে উৎসাহিত করা হবে। অর্থাৎ
মডারেটর প্রশ্ন সম্পাদনার জন্য অধিক রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাবেন।
প্রত্যেক সম্পাদনাকারী তাঁর নিজস্ব অ্যাডমিন প্যানেলে সম্পাদিত প্রশ্নের
সংখ্যা ও তালিকা, অর্জিত পয়েন্ট, র্যাঙ্কিয়ে নিজের অবস্থান দেখতে পাবেন।
০৫.৪ প্রশ্নদাতারা
যেভাবে পুরস্কৃত হবেন
প্রশ্নদাতারা প্রশ্ন ব্যাংকে মানসম্মত প্রশ্ন জমাদানের পরিমাণের ভিত্তিতে
পয়েন্ট লাভ করবেন। তাঁর তৈরি কোন প্রশ্ন যদি মডারেটর কর্তৃক গ্রহিত হলেই তিনি পয়েন্ট
লাভ করবেন। মডারেটর যদি সরাসরি নির্বাচনের ভিত্তিতে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন, ব্যাংকে জমা
দেন, তাহলে প্রশ্নকারী বেশি পয়েন্ট পাবেন। যদি প্রশ্নটি এডিট/সম্পাদনার মাধ্যমে জমা
হয়, তাহলে কম পয়েন্ট লাভ করবেন।
এই সকল পয়েন্ট দ্বারা প্রশ্নকারীদের যোগ্যতা পরিমাপ করা হবে। একজন সাধারণ
প্রশ্নকারী একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট লাভ করার পর, তিনি মডারেটর হবার যোগ্যতা অর্জন করতে
পারবেন। এই পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে তিনি বোর্ড পরীক্ষার প্রধানপরীক্ষক, পরীক্ষক হতে
পারবেন। দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হবেন। এর বাইরেও দৃষ্টান্ত
সৃষ্টি করার জন্য সম্মাননা সূচক পুরস্কার প্রদান করা হবে।
০৫.৫ প্রশ্ন সম্পাদনাকারী
যেভাবে পুরস্কৃত হবেন
প্রত্যেকটি প্রশ্ন সম্পাদনার মাধ্যমে ব্যাংকে প্রশ্ন জমাদানের জন্য সম্পাদনাকারী
পয়েন্ট অর্জন করবেন। দুই ধরনের সম্পাদনা ব্যবস্থা থাকবে। এক. নির্বাচনের ভিত্তিতে সরাসরি
প্রশ্ন ব্যাংকে প্রশ্ন জমাদান এবং সম্পাদনার মাধ্যমে প্রশ্ন জামাদান। সিস্টেমে সম্পাদনার
ভিত্তিতে প্রশ্ন জামাদানকে উৎসাহিত করা হবে। অর্থাৎ মডারেটর প্রশ্ন সম্পাদনার জন্য
অধিক রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাবেন।
একজন মডারেটর একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট লাভ করার পর, তিনি বোর্ড পরীক্ষার পরীক্ষক
হবার যোগ্যতা অর্জন করতে পারবেন। এই পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে তাঁর পক্ষে প্রধান পরীক্ষক
াও হবেন। তিনি দেশে বিদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত হবেন। এক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত
সৃষ্টি করার জন্য সম্মাননা সূচক পুরস্কার প্রদান করা যেতে পারে।
০৫.৬ র্যাংকিং প্যানেল
একটি চূড়ান্ত এবং সর্বজন প্রদর্শিত র্যাংকিং প্যানেল থাকবে। প্রশ্নদাতা
ও সম্পাদনাকারীর নাম ও ছবির সাথে সর্বোচ্চ পয়েন্ট অর্জনকারী থেকে সর্বনিম্ম পয়েন্ট
অর্জনকারীদের তালিকা থাকবে।
০৫.৭ সতর্কতা
কোন গাইড থেকে প্রশ্ন করা নিষিদ্ধ । হুবহু গাইডের প্রশ্নের মিল পাওয়া গেলে
সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষক/প্রশ্ন দাতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
পুরো সিস্টেমে কপি পেস্ট এড়ানোর জন্য একটি প্লাগারিজম ফাইন্ডিং টুল ব্যবহার
করা হবে। মডারেটরের দায়িত্ব হবে এই টুলটি ব্যবহার করে একই ধরনের প্রশ্নের একাধিক ইনপুট
বন্ধ করা। আবার সুপার অ্যাডমিন থেকেও ব্যাংকে জমা পড়া প্রশ্নের একাধিক ইনপুটকে চিহ্নিত
করতে পারবেন। কোন সাধারণ প্রশ্নদাতা একাধিকবার প্লাগারিজমের আশ্রয় নিলে সতক বার্তা
পাবেন।
সুপার অ্যাডমিন থেকে প্রতিটি প্রশ্নের প্রশ্নকারী ও সম্পাদনাকারীকে চিহ্নিত
করা সম্ভব হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন