সারাদেশের এমপিওভুক্ত ৫ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সুখবর। নতুন স্কেলেই তারা আগামীতে বেতন পাবেন। এ জন্য বড়জোর দু-এক মাস সময় লাগবে। মঙ্গলবার প্রকাশিত পে স্কেলের গেজেটে পরিষ্কারভাবে এই লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর বিষয়ে কোনো কিছু না থাকায় হতাশায় ভেঙে পড়েছিলেন তারা। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের এক বক্তব্যে অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে গেছে, এই শিক্ষকরাও পে স্কেলভুক্ত হচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী সমকালকে বলেছেন, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন পে স্কেল জুলাই
থেকেই কার্যকর হবে। তবে এতে দু-এক মাস সময় লাগতে পারে। এর বেশি নয়।
সমকালের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অর্থ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই মূলত এই শিক্ষক-কর্মচারীরা জানুয়ারি থেকে পে স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। গতকাল যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয় পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। বর্তমানে সারাদেশের ২৬ হাজার ৭০টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৪ লাখ ৭৭ হাজার ২২১ জন শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্ত রয়েছেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এমপিওভুক্তি খাতে সরকারের খরচ হয়েছে ৭ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা। তবে নানাভাবে এ অর্থের অপচয় হচ্ছে বলে মনে করে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ জন্য অপচয় বন্ধ করে গত জুলাইয়ে এমপিওভুক্তির জন্য একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে বলা হয়। ওই নীতিমালা প্রণীত হলে তার আলোকে এমপিওভুক্তির কার্যক্রম যৌক্তিকভাবে ঢেলে সাজানো হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে, এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালার সঙ্গে পে স্কেলের কোনো সম্পর্ক নেই। একটির সঙ্গে অপরটি কেন মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে, তা তারা বুঝতে পারছেন না।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে সমকালকে বলেন, নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা নতুন পে স্কেল অনুযায়ী 'বর্ধিত বেতন' পাবেন না। তিনি আরও বলেন, খসড়া নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন করা হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো প্রতিনিধি বৈঠকে আসেননি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক_ এ মন্তব্য করে মুহিত বলেন. 'তারা চেয়েছিলেন এমপিও খাতে বড় ধরনের সংস্কার করতে। কিন্তু তারা (শিক্ষা মন্ত্রণালয়) কোনো সংস্কার চায় না। বরং অসহযোগিতা করছে। তবে মুহিত এ কথাও বলেন, নতুন স্কেলেই বেতন পাবেন শিক্ষকরা। আরও কিছু সময় লাগবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জানুয়ারিতেই সরকারি চাকরিজীবীদের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন পে স্কেলে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত এমপিওর মূল্যায়ন প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয় না দেওয়ায় শেষ মুহূর্তে শিক্ষকদের বাদ দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে. গেজেট প্রকাশের এক সপ্তাহ আগে শিক্ষা সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে এমপিও নীতিমালার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চাওয়া হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। যে কারণে জানুয়ারিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নতুন পে স্কেলে বেতন দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন গতকাল সমকালকে বলেন, তিনি সদ্য এ মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলেও পুরোপুরি দায়িত্ব পালন করবেন রোববার থেকে। চিঠির বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবহিত নন। গত এক মাস ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা সচিবের দায়িত্ব পালনকারী অতিরিক্ত সচিব এএস মাহমুদ বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি তিনি পাননি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটি পত্র তার নজরে না আনার কারণ নেই। তবু তিনি খোঁজ নেবেন। সিলেটে অবস্থানরত শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ টেলিফোনে সমকালকে বলেন, এক সপ্তাহ আগে অর্থ মন্ত্রণালয় কোনো চিঠি দিয়েছিল কি-না তা তিনি অবহিত নন। খোঁজ নিয়ে দেখবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্র বলেছে, পে স্কেলের সঙ্গে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কিত নয়। গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানত যে, জানয়ারিতেই'বর্ধিত বেতন' পাবেন শিক্ষকরা। শেষ পর্যন্ত কী কারণে তাদের বাদ দেওয়া হলো, তা তাদেরও বোধগম্য নয়।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ সমকালকে বলেন, এমপিওর বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নের প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দুই মাস আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছিল। তারা সাড়া দেয়নি। সম্প্রতি আরেক দফা তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও জবাব পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদন জমা দিলে এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।
জানুয়ারি থেকে আন্দোলনে যাবেন শিক্ষকরা : এদিকে, জানুয়ারি থেকে বর্ধিত বেতন না পেলে আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলো। নতুন পে স্কেলে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা। তারা অবিলম্বে শিক্ষকদের বিষয়টি সুরাহার দাবি জানিয়েছেন। না হলে জানুয়ারি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে টানা কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দিয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলো। শিক্ষক কর্মচারী সংগ্রামী ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম রনি বলেন, এখন তাদের আন্দোলন করা ছাড়া বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ (বিপিসি) সভাপতি প্রবীণ শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ মাজহারুল হান্নান বলেন, প্রকাশিত পে স্কেল শিক্ষকদের হতাশ করেছে। '৮০ সাল থেকে শিক্ষকরা পে স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে আসছেন। অথচ এবারই প্রথম পে স্কেলে বেসরকারি শিক্ষকদের সম্পর্কে একটি শব্দও যুক্ত করা হয়নি। শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু বলেন, একটি মহলের যড়যন্ত্রের শিকার শিক্ষকরা। এ জন্য গেজেটে শিক্ষকদের বিষয়টি অস্পষ্ট করে রাখা হয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন